খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ ভাদ্র, ১৪৩১ | ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ আজ

কোটা আন্দোলনে তিন সাংবাদিক হত্যা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার তদন্ত দাবি সিপিজের

গেজেট ডেস্ক 

বাংলাদেশে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনজন সাংবাদিক হাসান মেহেদি, মো. শাকিল হোসেন ও আবু তাহের মো. তুরাবকে হত্যা ও দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভের রিপোর্ট কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা তদন্তের জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। ২৬শে জুলাই নিউ ইয়র্ক থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে সিপিজে। এখানে তার অনুবাদ তুলে ধরা হলো- সিপিজের এশিয়া প্রোগ্রাম সমন্বয়ক বেহ লিহ ই বলেন, কোটা বিরোধী আন্দোলনের রিপোর্ট করার সময় সাংবাদিক হাসান মেহেদি, মো. শাকিল হোসেন এবং আবু তাহের মো. তুরাব হত্যায় গভীরভাবে হতাশ সিপিজে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চালানো সব রকম আক্রমণের (অ্যাসল্ট) জন্য যারা দায়ী তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। পুরোপুরি চালু করতে হবে ইন্টারনেট ও ফোন সার্ভিস, যাতে জনস্বার্থে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত হয়। উল্লেখ্য, আহত সাংবাদিকদের মধ্যে আছেন দৈনিক মানবজমিনের ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ। তার ওপর ছররা গুলি ছোড়া হয়। এসব গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। ব্যাকপ্যাকের আটকে যায় বেশ কিছু গুলি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১৮ই জুলাই ইন্টারনেট শাটডাউন করে দেয় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।

ভয়াবহভাবে মোবাইল সার্ভিসও বিঘ্নিত হয়। ২৩শে জুলাই মঙ্গলবার রাতে সীমিত পরিসরে আংশিকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়েছে। কিন্তু ২৬শে জুলাই পর্যন্তও মোবাইল সার্ভিস ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ ছিল (যদিও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এসব সার্ভিস চালু হয়নি)।

সিপিজে বলেছে, হাসান মেহেদি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট ঢাকা টাইমসের একজন রিপোর্টার। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে ১৮ই জুলাই তাকে ভয়াবহভাবে গুলি করা হয়। সিপিজে’কে ঢাকা টাইমসের সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন বলেন, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা হত্যা করেছে মেহেদিকে। কিন্তু সীমিত ইন্টারনেট সংযোগের কারণে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি। শাকিল হোসেন দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার একজন প্রতিনিধি। একই দিন গাজীপুর শহরে তাকে হত্যা করা হয়- সুইডেনভিত্তিক একটি অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ফোরাম এ তথ্য দিয়েছে। অন্যদিকে দৈনিক জালালাবাদ ও দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার রিপোর্টার তুরাব। তিনি ‘প্রেস’ লেখা বক্ষ বেষ্টনী পরেছিলেন। ১৯শে জুলাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট শহরে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির র‌্যালির সময় পুলিশ তাকে ভয়াবহভাবে গুলি করে হত্যা করে।

নিউ এইজ পত্রিকা এবং দৈনিক জালালাবাদের একজন রিপোর্টার প্রতিশোধ নেয়া হবে এই আতঙ্কে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি সিপিজের কাছে। ওদিকে ১৮ই জুলাই বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রধান কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সঙ্গে আগুন দেয়া হয় এর বেশ কিছু গাড়িতে। সেখানে অভিযান চালায় দাঙ্গা পুলিশ। নিচে তালিকাভুক্ত ১৪ জন সাংবাদিকের ওপর হামলার বিষয় নিশ্চিত হয়েছে সিপিজে। একই সঙ্গে পুলিশ, বিক্ষোভকারী অথবা ছাত্রলীগের সমর্থকদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন সাংবাদিক। এমন রিপোর্টের বিষয়ে অব্যাহতভাবে তদন্ত করছে সিপিজে। ১৪ সাংবাদিকের মধ্যে মাথায় আঘাত পাওয়া সহ নানা রকমভাবে আহত কয়েকজনের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

পুলিশি হামলা
১৬ই জুলাই। এদিন প্রতিনিধি মেহেদি মামুন (দৈনিক বণিক বার্তা), ওয়াজাহাতুল ইসলাম (দৈনিক জনকণ্ঠ), আবদুর রহমান খান সারজিল (দৈনিক বাংলা) এবং ফ্রিল্যান্সার জুবায়ের আহমেদের ওপর গুলি ছোড়ে পুলিশ। তারা নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা ঢাকার অদূরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ কভার করছিলেন।

১৭ই জুলাই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশি অ্যাকশনে শিক্ষার্থীরা যখন ক্যাম্পাস ছাড়ছিলেন, তখন তা রেকর্ডিং করছিলেন প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন। পুলিশ তার ফোনটি কেড়ে নেয়।

সিপিজে’কে আল মামুন বলেন, নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়া এবং নিজের প্রেসকার্ড দেখানোর পরও পুলিশ অফিসাররা রাইফেলের বাঁট দিয়ে তাকে প্রহার করে। তিনি দৌড়ে সরে যাওয়ার সময় তার ওপর রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ফিচার লেখক শাদিকুর মাহবুব ইসলাম সিপিজে’কে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ থেকে একজন বিক্ষোভকারীকে তুলে নেয় পুলিশ। সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার সময় তিনি এবং অন্য দু’জন সাংবাদিকের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওইদিন পরের দিকে আবার বিক্ষোভকারী ছাত্রদের ঘেরাও করে রাখা পুলিশ দুই রাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে তার সামনে।

১৮ই জুলাই। সিপিজে’কে বাংলা আউটলুক ওয়েবসাইটের প্রতিনিধি মুক্তাদির রশিদ বলেন, ঢাকার মিরপুর পুলিশ স্টেশনের কাছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও ক্ষমতাসিন দলের নেতাকর্মীরা ছররা গুলি করে। এ সময় তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন। দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ বলেন, ঢাকায় একই এলাকায় রিপোটিংয়ে থাকা একটি গ্রুপের ওপর পুলিশ বুলেট ছোড়ে। এ সময় তিনি দু’হাত উপরে তুলে নিজের পরিচয় দেন। তার সঙ্গে এ সময় অন্য সাতজন সাংবাদিক ছিলেন।

ছাত্রলীগের হামলা
১৫ই জুলাই। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ইসলাম সিপিজেকে বলেন, নিজের সাংবাদিক পরিচয় দেখানো সত্ত্বেও ছাত্রলীগের সমর্থকরা তাকে রড দিয়ে প্রহার করে। তার দিকে ইটপাটকেল ছোড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের জোরপূর্বক ছত্রভঙ্গ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। ডেইলি স্টারের সিনিয়র ফটোগ্রাফার প্রবীর দাস বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রিপোর্টিং করার সময় তাকে লাঠি দিয়ে প্রহার করেছে ছাত্রলীগের সমর্থকরা। প্রথম আলো পত্রিকার ফটোসাংবাদিক দিপু মালাকার বলেন, ক্যাম্পাসে রিপোর্টিং করার সময় ছাত্রলীগের সমর্থকরা তার ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

১৬ জুলাই। সাউথ এশিয়ান টাইমসের প্রতিনিধি সাকিব আহমেদকে রড দিয়ে প্রহার করে ছাত্রলীগের সমর্থকরা। কেড়ে নেয় তার প্রেসকার্ড। এ সময় তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রিপোর্ট করছিলেন।

বিক্ষোভকারীদের হামলা
১১ই জুলাই। এদিন ঢাকার শাহবাগ এলাকায় সময় টিভির রিপোর্টার তোহা খান তামিমকে ধাক্কা দেয় বিক্ষোভকারীরা। তাকে একটি হেলমেট দিয়ে আঘাত করে। এই সম্প্রচার মাধ্যমের সিনিয়র ভিডিও সাংবাদিক প্রিন্স আরেফিনের ক্যামেরা ভাঙচুর করে।

১৬ই জুলাই। উত্তরের বগুড়া শহরে যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার ও স্থানীয় ব্যুরো প্রধান মেহেরুল সুজনকে বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এ সময় তার গলায় ছিল প্রেসকার্ড এবং তিনি একটি মাইক্রোফোন বহন করছিলেন।

এ বিষয়ে ম্যাসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলি আরাফাত ও ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সিপিজে। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!